সমস্ত লেখাগুলি

পরিবেশ দিবসে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। -
জয়র্ষি ভট্টাচার্য
Nov. 20, 2024 | পরিবেশ | views:781 | likes:1 | share: 1 | comments:0

পৃথিবীর প্রথম ১০০টি জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পগোষ্ঠী বিশ্বের মোট দূষণের ৭০% এর বেশী দূষণ ঘটায়। অপরদিকে সারা পৃথিবীর প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহারের ফলে ঘটা দূষণের পরিমাণ ১% এরও সামান্য কম। তবুও দূষণ রোধে জনপ্রিয় শ্লোগান প্লাস্টিক স্ট্র ব্যবহার বন্ধ করতে বলা।

একইরকমভাবে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনে সর্বাধিক জীবাশ্ম জ্বালানি খরচ করলেও তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮.১ টনের কাছাকাছি, যেখানে গোটা বিশ্বে একদিনে জ্বালানিজনিত দূষণের পরিমাণ ৩৩০০ কোটি মেট্রিক টন। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে কোনো ব্যক্তির এসি, ফ্রিজ, গাড়ির ব্যবহারের ফলে হওয়া দূষণ পরিবেশে সামান্যতম প্রভাবটুকুও ফেলে না। 

পরিবেশ রক্ষায় সবচেয়ে জনপ্রিয় শ্লোগান, 'গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান'। অথচ, স্রেফ আমেরিকাই এখনো অবধি হওয়া জঙ্গল ধ্বংসের ৭৫% এর ভাগিদার। আমাজ়ন জঙ্গলকে গত ৫০ বছরে ১৭% ছাঁটা হয়েছে। প্রতিটাই করেছে রাষ্ট্রের অনুমোদনপ্রাপ্ত কোনো না কোনো বৃহৎ কর্পোরেট। ফলে আমি আপনি আজকে একটি করে গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ১% উন্নতিও করতে পারবো না। তাছাড়া একটি পুরনো গাছের সাথে একটি বৃহৎ বাস্তুতন্ত্র জুড়ে থাকে। নতুন গাছ লাগিয়ে সেই পরিবেশ গড়ে তোলা যায় না। বিখ্যাত পরিবেশবিদ জঁ বেলেমি ফস্টার তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, বিশ্বে বর্তমানে যত জীবাশ্ম জ্বালানি আছে, তার প্রায় সাড়ে তিনগুণ গাছ লাগালেও পরিবেশ দূষণ রোধের জন্য যথোপযুক্ত অরণ্য সৃষ্টি সম্ভব না। তিনি অঙ্ক কষে আরও দেখিয়েছেন, একটি প্রযুক্তির দূষণ রোধে আনা আরেকটি প্রযুক্তি গুণোত্তর প্রগতিতে দূষণ বৃদ্ধিই করবে যতক্ষণ না পুঁজির স্বার্থে প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে। ফলে গাছ লাগানোর চেয়ে অনেক অনেক বেশী জরুরি গাছ বাঁচানো। আর যেসব রাষ্ট্র এই অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে বিশ্ব জুড়ে, তারাই এমন পরিবেশ দিবসের দিন বেছে গাছ লাগানো বা স্ট্র বন্ধের বিজ্ঞাপন দেয়, অথচ পুঁজিপতি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অগ্নিবর্ষণ করে না।

আদতে বিষয়টা খুব সহজেই বোধগম্য। বিশ্বে সেসব প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হয় যা লাভজনক। বিজ্ঞানী ও প্রাযুক্তিকেরা বাঁধ নির্মাণ বা সবুজ বিপ্লবের মতো প্রযুক্তির বারংবার বিরোধিতা করে গেলেও আর্থিক লাভের স্বার্থে রাষ্ট্র ও তাকে অর্থ যোগান দেওয়া ব্যবসায়ীরা বারবার এসব প্রযুক্তি চালু করতে চেয়েছে। সেই স্বার্থে কেড়ে নিয়েছে প্রকৃতির আসল বন্ধু আদিবাসীদের। গঙ্গা, যমুনা দূষিত করে বেড়েছে মিনারেল ওয়াটারের ব্যবহার। মুনাফা করতে তারা শুষে নিয়েছে মাটির জল। অথচ, প্রাকৃতিক জল খেয়ে বেঁচে থাকা আদিবাসিন্দারারা পড়েছেন সঙ্কটে। জঙ্গলজীবীরা নিজেদের বাঁচার স্বার্থেই জঙ্গল বাঁচায়। সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে স্বামী হারানো স্ত্রীয়েরাও বাঘ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, বাঘ আছে তাই তাঁরা আছেন। বাঘ না থাকলে তাঁরাও থাকবেন না। প্রকৃতি নিয়ে এই বোধ যাঁদের আছে, তাঁদের থেকে জঙ্গল কেড়ে নিচ্ছে আদানি-আম্বানিরা। চিপকো আন্দোলনের মতো সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তাও জঙ্গল বাঁচিয়ে চলেছেন তাঁরা। একমাত্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্তিশালী প্রতিরোধই জঙ্গল ও প্রকৃতি বাঁচাতে পারে। পরিবেশ দিবসে পরিবেশ বাঁচানোর যথার্থ সদিচ্ছা থাকলে তাই পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে জঙ্গলজীবীদের সাথে গলা মিলিয়ে বলুন,

"গাঁও ছোড়াব নেহি, জঙ্গল ছোড়াব নেহি

মাহে-মাটি ছোড়াব নেহি, লড়াই ছোড়াব নেহি"

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86933